NAME
Ram thakur
Ram thakur

কয়েকজন অনুগামী ভক্তের জীবনে ঠাকুরের ভূমিকা

যে-সব অনুসারী ভক্ত বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের জীবনে শ্রীশ্রীরামঠাকুর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

১৯০৭-০৮ সালে তাঁর অংশাবতারের শেষ পর্বে বাংলার সাধারন মানুষ যখন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ অস্থিরতার মধ্যে ছিল, শ্রীশ্রীরামঠাকুর সাধারণ মানুষের জনবসতি অঞ্চলেই ফিরে এসেছিলেন; উদ্ভ্রান্ত মানব জাতিকে উৎসাহিত করেছিলেন, সাহস দেখিয়েছিলেন এবং ঐতিহাসিক সব সংকটের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সন্ধানে সঠিক পথ তাদেরও দেখিয়েছিলেন। এই সব ঘটনার কিছু কিছু তাঁর অনুগামীদের লেখায় ধরা আছে।

Image

১৯২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ। বাংলায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে যাবতীয় বাধাবিঘ্ন অগ্রাহ্য করে এই আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ। সমগ্র জাতিকে গ্রাস করেছিল এক অপ্রতিরোধ্য পরিমন্ডল। রামঠাকুরের কথা  গ্রন্থে ড. ইন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন : 'এই আন্দোলনে যোগ দিব কি দিব না, এই চিন্তাই অহর্নিশ করিতেছিলাম। রাত্রিতে ঘুম হইত না, আহারেও রুচি ছিল না। বন্ধুবান্ধব্দের সহিত নানা দিক হইতে কথাটার আলোচনাও করিতাম কিন্তু কিছুই স্থির করিতে পারিতেছিলাম না'। এই রকম সময় বৃন্দাবন থেকে বরদা বাবুকে লেখা এক চিঠিতে শ্রীশ্রীঠাকুর জানালেন : 'ইন্দুবাবুর মন বড়ই চঞ্চল হইয়াছে, তাহাকে একটু স্থির হইতে বলিবেন'। এরপর অধ্যাপক ড. বন্দ্যোপাধ্যায়ের উক্তি : 'ঠাকুরের অপার করুণায় আমার সমস্যার সমাধান হইয়া গেল, অনেকদিন পরে সেই রাত্রিতে নিশ্চিন্তে ঘুমাইতে পারিলাম'।

আর এক দৃষ্টান্ত চাঁদপুরের শ্রী উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নিজের অভিজ্ঞতার কথার লিপিবদ্ধ করেছেন শ্রীশ্রীরামঠাকুরের আবির্ভাব শতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থে। শ্রীশ্রীঠাকুরের সময়োপযোগী উপদেশের দৌলতে ইন্দুবাবুর মতো বহু পরিবার অনিশ্চিয়তার পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়েছিল। তেমনি আবার কুমিল্লার শ্রীমতী হেমপ্রভা মজুমদারের মতো যথার্থ স্বাধীনতা সংগ্রামী, বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সভাপতি শ্রী সত্যেন্দ্রচন্দ্র মিত্র, প্রখ্যাত চিকিৎসক ও কংগ্রেস নেতা ডাক্তার যতীন্দ্র মোহন দাশগুপ্ত ও তাঁর সহধর্মিণী ঠাকুরের আশীর্বাদ পেয়ে ধন্য হয়েছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা, ১৯৪২-এর 'ভারত ছাড়' আন্দোলন অথবা বাংলার ১৯৪৩-এর মন্বন্তরের মতো চরম ঐতিহাসিক বিপর্যয়ের মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর কলকাতা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখলি, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ ও আসাম জুড়ে দীর্ঘ পরিভ্রমণ করেছেন, তাঁর আশ্রিতদের মনে সাহস ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে - যাতে এরা সংকটের মোকাবিলা করতে পারে। কখনও কখনও তিনি অন্যান্য প্রদেশেও যেতেন।

জীবনের শেষ পর্বে শ্রীশ্রীঠাকুর চৌমুহণীতে ভাগ্যবান ভক্ত উপেন্দ্র সাহা'র বাংলোতে অবস্থান করছিলেন। দেশ তখন জ্বলছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুণে; সর্বত্র এক ভয়াবহ পরিমন্ডল। ঐ পরিস্থিতিতে শ্রীশ্রীঠাকুরের দর্শন পেতে প্রতিটি প্রান্ত থেকে লোকেরা আসত। একদিন কোনও একজন বলে: 'বাবা, আমরা এ জায়গা থেকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমাদের গ্রামের প্রায় সকলেই ইতিমধ্যে চলে গেছে'। উত্তরে ঠাকুর জানতে চান স্বভুমি ছেড়ে তারা কোথায় যাবে। তিনি বলেন যে, ভাগ্য সর্বদাই তাদের সঙ্গে সঙ্গে যাবে। তাদের চিন্তা করতে বারণ করে তিনি বলেন যে, যদি তারা সত্যিই নিরাপত্তার অভাব বোধ করে, তবে তারা ঐক্যবদ্ধ হোক। উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, কোন অঞ্চলভূমি বন্যাপ্লাবিত হলে পিঁপড়ের মতো ক্ষুদ্র কীটেরাও তো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জলের উপর ভাসতে থাকে; তাদের মধ্যে কয়েকটা অবশ্য প্রাণ হারায়। (দ্রষ্টব্য : মহেন্দ্র চক্রবর্তী রচিত শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবনকথা)।

Image

জাতির বিভিন্ন বিপর্যয়ের মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরের ভূমিকা ছিল বহুমুখী; সাধারণ মানুষকে তিনি দিতেন পর্যাপ্ত নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বল-ভরসা শ্রী অখিলচন্দ্র রায় তার লেখা প্রবন্ধে এসব কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি লিখেছেন: সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তীব্রতা যখন তুঙ্গে উঠেছিল, জাতপাত ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ প্রাণভয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের চরণে আশ্রয় নিত। তবু, পূর্বোক্ত বাংলোটি কখনও আক্রান্ত হয়নি যদিও দুর্বৃত্ত দাঙ্গাবাজরা এক নাগাড়ে প্ররোচনামূলক প্রচার করে যে, বাংলোটি প্রতিক্রীয়াশীল সব শক্তিকে আশ্রয় দিচ্ছে। একদিন, বাংলোতে তখন প্রায় কেউ ছিল না, একজন ভক্ত শ্রীশ্রীঠাকুরের পদসেবা করছিল। হঠাৎ সেখানে হাজির হয় এক দুর্বৃত্ত এবং সেবারত ভক্তটিকে রেলস্টেশন সংলগ্ন দাঙ্গাবাজদের ডেরায় জোর করে নিয়ে যায়। তাঁকে টেনে নিয়ে যাওয়ার আগে বেচারা সজল চোখে আর্জি জানিয়েছিল ঠাকুর যেন তাকে রক্ষা করেন। ঠাকুর সঙ্গে সঙ্গে একজনকে পাঠিয়ে দিলেন এবং তার মাধ্যমে পাঠালেন তাঁর কঠোর সতর্কবাণী যে, তার ভক্তকে যদি তখনই ছেড়ে না দেওয়া হয়, তাহলে ভয়ঙ্করতম ও অকল্পনীয় কোনও ঘটনা ঘটবে এবং তা রোধ করার ক্ষমতা কারোর থাকবে না। একটু পরেই ভক্তটি কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এল শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে; তার দেহে ছিল শুধু কয়েকটা আচঁড়ের দাগ। তার করুণ অভিজ্ঞতার কথা শুনে ঠাকুর তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন যে, মানুষকে ভবিতব্যের মুখোমুখি হতেই হবে এবং দুঃখবিলাপ করা তাই অর্থহীন।

Best viewed in Firefox / Google Chrome / IE 9.0 or higher
© Shri Shri Kaibalyadham Jadavpur, West Bengal India, 2013.
Website Design By: DRS Tech