'তাহার ৮ হইতে ১২ বৎসর বয়স পর্য্যন্ত সামান্য বাঙ্গলা শিক্ষা মাত্র হইয়াছিল। কিন্তু ধর্ম্মের নিগূঢ় তত্ত্ব, এমন কি, প্রণবের অর্থ পর্য্যন্ত সে জলের মত বুঝাইয়া দিত। আমি তাহাকে বড় শ্রদ্ধা করিতাম। মধ্যে মধ্যে আমি তাহাকে পীড়াপীড়ি করিয়া আমার গৃহে আনাইতাম এবং পতি-পত্নী মুগ্ধ চিত্তে তাহার অদ্ভুত ব্যাখ্যা সকল শুনিতাম। (উৎসঃ গ্রন্থ আমার জীবন, চতুর্থ ভাগ)
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সাধক, দার্শনিক পণ্ডিত, তাঁহার অপূর্ব জীবনধারা আলোচনা করিলে বুঝা যায় যে, তিনি সেই পরম অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত আছেন যেখানে পৌঁছিবার জন্য অনাদিকাল হইতে অনন্ত যাত্রী ধাবমান রহিয়াছে,যিনি “অনু হইতে অনীয়ান ও মহান হইতেও মহীয়ান”। (উৎসঃ রামঠাকুরের কথা ও সৎপ্রসঙ্গ, প্রাককথন)
'বস্তুতঃই একজন মহাপুরুষ । লেখা পড়া কিছু জানেন না, সাধারন জ্ঞান মাত্র আছে, অন্য ভাষা ত জানেনই না। সংস্কৃত ভাষাও জানেন না। এমন কি মাতৃভাষা বাংলা সম্বন্ধেও সাধারণ ভাবে লিখিবার ও পড়িবার জ্ঞান ছাড়া অধিক জ্ঞান তাহার নাই। কিন্তু আলোচনার প্রসঙ্গে যে-সকল গভীর জ্ঞানের কথা তাঁহার মুখ দিয়া নির্গত হইত তাহার তুলনা নাই। সরলতা, অমায়িকতা, মাধুর্য্য ও নম্রতা তাঁহার চরিত্রের বিশিষ্ট লক্ষণ ছিল। তিনি সর্ব্বভূতে সত্যই ভগবৎ দর্শন করিতেন...।' (উৎসঃ মহামহোপাধ্যায় রচিত রামঠাকুরের কথাঃ সাধুদর্শন ও সৎপ্রসঙ্গ, ১ম খন্ড)
"যতীন, লোকে বলে সমুদ্রের পারাপার নেই । আমি বলি সমুদ্রেরও একটা পার বা শেষ আছে । কিন্তু তোমার ঠাকুরের কোনও পারাপার নেই। যা-ও দিলে শেষ সময় দিলে এখন আর সময় নেই।" (কবির সঙ্গে তাঁর চিকিৎসকের ও শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম ভক্ত ডাক্তার যতীন্দ্রমোহন দাশগুপ্তের কথোপকথন । বিবরণের উৎসঃ শ্রীকেশবলাল ঘোষ রচিত শ্রীশ্রীরামঠাকুর লীলা প্রসঙ্গ)
"ঠাকুর দুর্জ্ঞেয় কিন্তু আকর্ষণ তাঁর দুর্বার। বেশীক্ষণ তাঁর কথা মাথায় রাখতে পারি না। তাই বারবার উঠে আসি ।... তাঁর কাছে যখনই থেকেছি মনে হয়েছে সব পেয়েছির দেশে বাস করছি । দূরে গেলে সে সুর হারিয়ে ফেলি ।" (ডাক্তার যতীন্দ্রমোহন দাশগুপ্তের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের কথোপকথনঃ বিবরণের উৎসঃ শ্রীকেশবলাল ঘোষ রচিত শ্রীশ্রীরামঠাকুর লীলা প্রসঙ্গ)
"তাঁহার সহিত যে কি সম্বন্ধ তাহা জানি না। জানিবার প্রয়োজনও হয় নাই। তবে সত্য কথা এই যে, তাঁহাকে বড় ভাল লাগে --- প্রাণ ভরিয়া ভালবাসিতে ইচ্ছে হয়। তাঁহার স্বভাবসুন্দর মূর্তি, বাল-প্রকৃতি ও প্রাণস্পর্শিণী মধুর কথা সকলই প্রাণে আনন্দ ধারা বর্ষণ করে। তাঁহার মধ্যে কি জানি কি আছে, যাহা সকলকেই আকর্ষণ করে, অল্পেই আপন করিয়া লয়। একবার দেখিলে কেন জানিনা মন প্রাণ তাঁহার চরণে লুটাইয়া পড়িতে চায়। কলুষপঙ্কিল জীবনে যে কয়টি মুহুর্ত তাঁহার সঙ্গে অতিবাহিত করিয়াছি, তাঁহার পবিত্র স্মৃতি হৃদয়ে অঙ্কিত রহিয়াছে। প্রাণের আবেগে শেষে শুধু বলিতে ইচ্ছা হয়-'তুঁয়া চরণে মন লাগ হুঁ রে'। জন্মে জন্মে যেন তাঁহার শ্রীচরণের দাসানুদাস হইতে পারি-ইহাই প্রার্থনা।" (উৎসঃ তাঁহার কথাঃ শ্রীশ্রীরামঠাকুর আবির্ভাব শতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ)
"ঠাকুর মাসের পর মাস, বৎসরের পর বৎসর স্নান না করিয়া কাটাইয়া দিয়াছেন, অথচ ক্লেদের লেশও তাঁহাতে কখন প্রকাশ পায় নাই, তাঁহার সেই সৌম্য, প্রশান্ত, স্নিগ্ধোজ্জ্বল মূর্ত্তি অটুটই রহিয়াছে। আরও আশ্চর্য বিষয় এই যে, তাঁহার গায়ে সেই অপূর্ব নয়নাভিরাম রঙটি সকল সময় এক প্রকার থাকিত না। একটা স্থায়ী রঙ অবশ্যই ছিল কিন্তু কখনও কখনও দুই তিন ঘন্টার জন্য, কখনও বা দু' এক দিনের জন্য উহা পরিবর্তিত হইয়া ভিন্ন রুপ ধারন করিত। আমি স্বচক্ষে ইহা কয়েক বার প্রত্যক্ষ করিয়াছি। গায়ের রঙটি কখনও একটু হরিদ্রাভ, কখনও একটু রক্তাভ, কখনও বা কতকটা দুধের মত হইয়া যাইত এবং কিছুক্ষন থাকিয়া আবার ধীরে ধীরে মিলাইয়া যাইত। ইহাও দেখিয়াছি যে কখনও কখনও তাঁহার ললাটে আপনা হইতেই একটি ত্রিপুন্ড্র ফুটিয়া উঠিত, দু’তিন ঘন্টা থাকিয়া আবার চলিয়া যাইত। কেন এই রুপ হইত বলিতে পারি না, ঠাকুরকে কখনও সে কথা জিজ্ঞসা করি নাই। তিনি স্নান কেন করেন না, একথা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, তিনি উত্তরে বলিয়াছিলেনঃ 'স্নান করার দরকার হয় না, স্নান হয়।'" (উৎসঃ রামঠাকুরের কথা)
"আমরা সাধারনত যাহাকে 'বিদ্যা' বলি, সেই পুঁথিগত বিদ্যা শ্রীশ্রীঠাকুরের ছিল না বলিলেও অতুক্তি হয় না। কিন্তু... আমাদের ধারণার বহির্ভূত কোন কারণে... অসীম পান্ডিত্য তাঁহার ভিতর হইতে প্রকাশ হইয়া মহা শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিতগনকে বিস্ময়ে স্তম্ভিত ও অভিভূত করিত।" (উৎসঃ শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেবের স্মৃতি অর্চ্চনা)