NAME
Ram thakur
Ram thakur

শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের মোহান্ত পরম্পরা

প্রথম মোহান্ত শ্রীমৎ হরিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩০-১৯৩৫)

Imageপাহাড়তলিতে শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম স্থাপিত হওয়ার আগেই শ্রীশ্রীঠাকুর শ্রীমৎ হরিপদ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রথম মোহান্ত মনোনীত করেছিলেন । শ্রীমৎ বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ-বঙ্গে ২৪ পরগণা জেলার (বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগণা) অন্তর্ভুক্ত হালিশহরে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭২ সালে। কর্মজীবনে তিনি অসম প্রদেশের লিডু শহরে বসবাস করেছেন এবং সেখানেই শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে দীক্ষাগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল সঙ্গীতে এবং নিজেও ছিলেন একজন দক্ষ সঙ্গীতশিল্পী। প্রিয় পত্নীর মৃত্যুর পর পরই তিনি প্রবেশ করেন স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের এক পরিবর্তিত জীবনে; চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে সদস্য হিসাবে যোগ দান করেন অসমের থিওসফিকাল সোসাইটিতে। তিনি মোহান্ত নিযুক্ত হন ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে (জুলাই ২৬, ১৯৩০) যেদিন চট্টগ্রাম পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের উদ্বোধন হয়েছিল। তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি কৈবল্যস্তোত্রম এবং আরও বহু ভক্তিমুলক গান তিনি রচনা করেছিলেন। ঠাকুর তাঁকে তাঁর ভক্তদের দীক্ষাদান করার পূর্ণ দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সবিনয়ে তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ১৩৪১ বঙ্গাব্দের (১৯৩৫) চৈত্র মাসে শুভ দোল পূর্ণিমার দিন শ্রীমৎ বন্দ্যোপাধ্যায় দোল উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশে ফেণীতে গিয়েছিলেন; ঠাকুরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং সেদিনই শ্রীমৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ইহলোক ত্যাগ করেন। ফেণীর দাদপুর মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। ঠাকুর সেখানে ঘোষণা করেন যে, সেদিন থেকেই শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের মোহান্ত হবেন শ্রীমৎ শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায়। শ্রীমৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে নির্মাণ করা হয় হরগৌরী মন্দির।

Image

দ্বিতীয় মোহান্ত শ্রীমৎ শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৫-১৯৬০)

Imageপ্রথম মোহান্তের ইহলোক ত্যাগের পর শ্রীশ্রীঠাকুরের নির্দেশে ১৩৪১ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের দ্বিতীয় মোহান্ত হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন শ্রীমৎ শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় মহোদয়। শ্রী অবনীচরণ চট্টোপাধ্যায় ও শ্রীমতী ষোড়শীবালা দেবীর সন্তান শ্রীমৎ চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত কোয়ারপুরে জন্মগ্রহণ করেন ১২৭৯ বঙ্গাব্দের কার্ত্তিক মাসে। শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁকে নাম দেন ডিঙ্গামানিকে। শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁকে ভক্তদের নাম দানের অধিকার দেন। যাদবপুরের শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শ্রীমৎ চট্টোপাধ্যায় শ্রীশ্রীঠাকুরের পুণ্য পাদুকাযুগল অর্চনা করেছিলেন; দিনটি ছিল ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৩ই ফাল্গুন (২৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৪২)। পবিত্র এই পাদুকা দুটি আজও নিয়মিত পূজিত হয় শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে। শ্রীমৎ চট্টোপাধ্যায় ঠাকুরের জন্মভূমি বাংলাদেশের ডিঙ্গামানিকে 'সত্যনারায়ণ সেবামন্দির' দেবালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

১৩৫৬ বঙ্গাব্দের ১৮ই বৈশাখ (১লা মে ১৯৪৯) শ্রীশ্রীঠাকুর দেহরক্ষা করলে চৌমুহনীতে তাঁর দেহাবশেষ সমাহিত হয় শ্রীমৎ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এবং তাঁর পরিচালনায় সেখানে নির্মিত হয় 'সমাধিমন্দির' নামে সুন্দর একটি দেবদেউল। ডিঙ্গামানিক ও চৌমুহনীর দুটি ধাম ও দুটি মন্দিরে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজের উদ্যোগ নিয়েছিলেন শ্রীমৎ চট্টোপাধ্যায়। ভারতবর্ষ ও অধুনা বাংলাদেশের বহু স্থানে ভ্রমণ করে তিনি বহু ভক্তকে দীক্ষাদান করেছিলেন, নানা ধরণের পবিত্র উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। জীবনের শেষ কয়েক বছরে দুর্বল স্বাস্থ্য সত্ত্বেও তিনি তাঁর নিত্যকার কর্মধারারও কোনও পরিবর্তন করেননি।

'গুরুচক্র' ও 'ভগ্নী-সম্মেলন' নাম দুটিও তাঁরই দেওয়া। পশু, পাখি ও গাছপালার প্রতি তাঁর গভীর ভক্তি ও ভালবাসা ছিল। 'গোমাতা' উৎসব (গরুকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করা) তিনি প্রর্বতন করেছিলেন। মোহান্ত থাকাকালীন, পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে কামধেনুমাতা ও ময়নাপাখির আবাসস্থল হয় এবং পরে তাদের মৃত্যুর পর সমাধিতে স্বতন্ত্র স্মৃতি ফলক স্থাপন করা হয়। ১৯৬০ সালেই ২ রা মার্চ সরস্বতী আরাধনার পর তিনি পরলোক যাত্রা করেন। পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে তাঁর মরদেহ সমাহিত করা হয় এবং সেখানে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

তৃতীয় মোহান্ত শ্রীমৎ ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৯৬০-১৯৭১)

Image১৯৬০ সালে দ্বিতীয় মোহান্তের মহাপ্রয়াণের পর শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের তৃতীয় মোহান্ত হন শ্রীমৎ ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পূর্বসূরীর অনুমোদন অনুযায়ী। তিনি ১২৯৬ বঙ্গাব্দে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আউটশাহী-তে জন্মগ্রহণ করেন, শৈশব কাটে চাঁদপুরের কাছে কালীগঞ্জে। পেশায় চিকিৎসক, তিনি পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের ভক্তিমূলক ক্রিয়াকর্মের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হন। নাম গ্রহণ করেছিলেন শ্রীমৎ শ্যামাচরণ চট্ট্যোপাধ্যায় কাছে। শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের উন্নয়নমূলক যেসব কাজ শ্রীমৎ শ্যামাচরণ চট্ট্যোপাধ্যায় অসমাপ্ত রেখে যান সেগুলি সম্পূর্ণ করার ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ ও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন শ্রীমৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আগতপ্রায় বিপদ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সচেতন থেকেও পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম ছেড়ে যাননি এবং ১৯৭১ সালের ২৯ শে মার্চ পশুতুল্য বর্বর খান সৈন্যদের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে তিনি রেখে যান চরম আত্মত্যাগের পরম দৃষ্টান্ত, আপন প্রাণের চেয়েও শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের প্রতি তাঁর ভালোবাসার অবিস্মরণীয় নির্দশন। তাঁর দেহাবশেষ সমাহিত করা হয় পাহাড়তলিতে দ্বিতীয় মোহান্তের স্মৃতিস্তম্ভের পাশেই।

চতুর্থ মোহান্ত শ্রীমৎ ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৭২-২০০০)

Image১৯৭১ সালে ২৯ শে মার্চ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্যদের তৃতীয় মোহান্তের নৃশংস হত্যার পর ১৯৭২ সালে শ্রীমৎ ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় মহোদয়-কে শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের চতুর্থ মোহান্ত হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হয়। শ্রীআশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীমতী লাবণ্যপ্রভার সন্তান শ্রীমৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৩২৫ বঙ্গাব্দের ৩রা অগ্রহায়ণ (১৯১৮ সালের ১৬ই নভেম্বর) বাংলাদেশের বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ. পাশ করে গেজেটেড অফিসার হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন এবং নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনা শহরের সার্কেল অফিসার ছিলেন শ্রীমৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নানারকম উন্নয়ন ও ধর্মীয় ক্রিয়াকর্মে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে তিনি নামগ্রহণ করেছিলেন। মোহান্ত হিসাবে কর্মভার গ্রহণ করার পরেই তিনি শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অন্যান্য মন্দিরগুলির পুনর্নিমাণ ও সম্প্রসারণের কাজ সুসম্পন্ন করেন। কলকাতায় যাদবপুরের শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের দাতব্য ঔষধালয়ের উন্নতিসাধন তাঁর উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞের একটি দৃষ্টান্ত। একনিষ্ঠ ভক্তদের নামদানের জন্য তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের মতো ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। মোহান্ত হিসেবে তাঁর কার্যকালের মধ্যে শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম বিশেষ গৌরবের আসনে সুস্থিত হয়। যাদবপুরের শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে জীবনের শেষ বছরগুলি অতিবাহিত করেছিলেন। সর্বশ্রদ্ধেয় চতুর্থ মোহান্ত কৈবল্যলোকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন ২০০০ সালের ১৩ মে। তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে এবং যাদবপুরের শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে তাঁর স্মৃতিতে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়। তাঁর চিতাভস্ম পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে পাঠানো হয় এবং সেখানেও তাঁর স্মৃতিতে স্থাপিত হয় একটি স্মৃতিসৌধ।

পঞ্চম মোহান্ত শ্রীমৎ বিমলেন্দু বিকাশ রায়চৌধুরী (২০০১-২০০৫)

Imageচতুর্থ মোহান্তের তিরোধানের পর পঞ্চম মোহান্ত হিসেবে শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শ্রীমৎ বিমলেন্দু বিকাশ রায়চৌধুরী ২০০১ সালের ৯ই ডিসেম্বর। বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার অর্ন্তগত বাকিলা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালের ১লা নভেম্বর। পিতা প্রয়াত রাজেন্দ্রলাল রায়চৌধুরী ছিলেন বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রখ্যাত প্রধান শিক্ষক-যে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর পিতামহ জমিদার প্যারিকৃষ্ণ রায়চৌধুরী। শ্রীমৎ বিমলেন্দু বিকাশ রায়চৌধুরী অর্থনীতিশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ শেষ করেন এবং ১৯৬২ সালে আইন শাস্ত্রে স্নাতক হয়ে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮১ সালে আমেরিকার ডালাসে আর্ন্তজাতিক কমপ্যারাটিভ ল সেন্টার তাঁকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করে। প্রায়ঃশই প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিকালীন তাঁকেই বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। ২০০০ সালের ১১ই জানুয়ারি অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশে ল-কমিশনের সদস্য নিযুক্ত হন। ২০০১ সালে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সেই সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা। বাংলাদেশ রেড ক্রেসেন্ট সোসাইটি ও ঢাকা শহর কেন্দ্রিক ব্রাহ্ম সমাজকল্যাণ ট্রাস্টের আজীবন সদস্য শ্রীমৎ রায়চৌধুরী অন্যান্য বহু ধর্মীয় ও সৎকর্মোদ্যোগী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের গঠনমূলক ও কল্যাণপ্রদ ক্রিয়াকর্ম সম্প্রসারণের ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। তাঁর আন্তরিক অনুপ্রেরণায় যাদবপুরের শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম সমাজে দরিদ্র মানুষজনের শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যদানের এক অভিনব কর্মসূচী প্রবর্তন করে। তা ছাড়া তাঁরই উদ্যোগের ফসল যাদবপুর শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে ধর্মীয় সেম্বর। ২০০৬ সালের ১০ই এপ্রিল কলকাতায় তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁরপুস্তকের গ্রন্থাগার উদ্বোধন করা হয় ২০০৩ সালের ৯ই ডি মরদেহ সমাহিত হয় পাহাড়তলির শ্রীশ্রীকৈবল্যধামে এবং সেখানে স্থাপিত হয় একটি স্মৃতিসৌধ।

ষষ্ঠ মোহান্ত শ্রীমৎ অশোককুমার চট্টোপাধ্যায় (২০০৬ – ২০২০)

Imageপঞ্চম মোহান্তের জীবনাবসানের পর শ্রীমৎ অশোককুমার চট্টোপাধ্যায় শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের ষষ্ঠ মোহান্ত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৪১২ বঙ্গাব্দে ৩১শে শ্রাবণ (২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট)। শ্রীঅতুলচন্দ্র ও শ্রীমতী অমিয়বালার সন্তান শ্রীমৎ চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত বানিয়াগেটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৬ সালের ২রা জানুয়ারি। ইংরেজিতে এম.এ. পাশ করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসাবে অধ্যাপনা করেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে এবং শেরপুর গভর্ণমেন্ট কলেজের ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। শ্রীমৎ চট্টোপাধ্যায়কে নামদান করেছিলেন শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের চতুর্থ মোহান্ত শ্রীমৎ ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের যাবতীয় ক্রিয়াকর্ম অনুপ্রাণিত হয়ে চলেছে তাঁরই স্বহৃদয় আশীর্বাদে। তাঁর সার্বিক সহযোগিতা ও আশীর্বাদ ছাড়া আদৌ সম্ভব হত না শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের ওয়েবসাইট চালু করার কাজটি। তাছাড়া সমাজের কল্যাণের জন্য শ্রীশ্রীকৈবল্যধামের গঠনমূলক ও কল্যাণকর ক্রিয়াকর্মের পরিধি আরও বিস্তৃত করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করেন শ্রীমৎ অশোককুমার চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অনুপ্রেরণা ও আশীর্বাদে শ্রীশ্রীঠাকুর এবং শ্রদ্ধেয় মহারাজবৃন্দের দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য চিত্র সংকলিত অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। ওনার ঐকান্তিক উদ্যোগেই শ্রীশ্রীযাদবপুর কৈবল্যধাম আশ্রমে ২৫কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন সৌরচালিত বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা শুরু হয়। এছাড়াও দু-দেশের শ্রীশ্রীরামঠাকুরের বিভিন্ন মন্দির প্রতিষ্ঠানসহ ধামে কৈবল্যপ্রাপ্তির সহজ উপায় "শ্রীনাম" ভক্তদের মাঝে বিতরণ করেন। ২০শে ফাল্গুন, ১৯২৬ (২০২০ সালের ০৪ঠা মার্চ) বুধবার রাত্রি ২.১৫ মিনিটে কলকাতার একটি হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়। ২২শে ফাল্গুন, ২০২০ (২০২০ সালের ০৬ই মার্চ) তাঁর পুতদেহ শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম, পাহাড়তলী (চট্টগ্রাম), বাংলাদেশে লক্ষাধিক ভক্তের উপস্থিতিতে সমাধিস্থ করা হয় এবং সেখানে স্থাপিত হয় একটি স্মৃতিসৌধ।

সপ্তম মোহান্ত শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য (২০২০ – )

Imageশ্রীশ্রীকৈবল্যনাথের পরম পূজ্যপাদ ৬ষ্ঠ মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ অশোককুমার চট্টোপাধ্যায় এর আত্মা পরমাত্মায় লীন হবার পর বিগত ১০ শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (২৬ জুলাই ২০২০ খ্রিস্টাব্দ) রবিবার সপ্তম মোহন্ত মহারাজ হিসেবে শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় শ্রীশ্রী কৈবল্যধামে অধিষ্ঠিত হন।

শ্রীশচীন্দ্র লাল ভট্টাচার্য্য ও শ্রীমতি চারুবালা ভট্টাচার্য্যের জ্যেষ্ঠ সন্তান শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য বাংলা ২৫শে বৈশাখ ১৩৫৯ বঙ্গাব্দ (ইংরেজী ৮ই মে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ) চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া’র গৈরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে জন্মের পরপরই তাঁর পিতামাতা স্বপরিবারে সীতাকুণ্ডে মাতুলালয়ে চলে আসেন। সে থেকে তিনি পরমতীর্থ সীতাকুণ্ডের সূর্য্যসন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠেন।

শিক্ষাজীবনে স্নাতক পাস করার পরপরই তিনি অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডে ক্যাশিয়ার পদে যোগদান করে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে সুনাম ও দক্ষতার সাথে কর্মজীবনের ইতি টানেন।

তাঁর মাতামহ স্বনামধন্য পণ্ডিত ও কবিরাজ শ্রীচন্দ্রনাথ পুরোহিত তৎকালীন সীতাকুণ্ড স্রাইন এস্টেটের রাজ পুরোহিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে তাঁরই স্নেহসান্নিধ্যে তাঁর পাণ্ডিত্যে হাতেখড়ি। সাথে সাথে তিনি বেদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, চণ্ডী, শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা, গুরুগীতা, বেদবাণীসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের রস আস্বাদনেও ব্রতী হন। তিনি ৭/৮ বছর বয়স হতে শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্বেত-শুভ্র পটের নিবিড় আকৃষ্টতা অনুভব করেন এবং ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি তাঁহান শ্রীপটের সন্মুখে তন্ময়ভাবে আত্মমগ্ন থাকতেন। এ ধারাবাহিকতায় শ্রীশ্রীঠাকুরের বিভিন্ন মঠ মন্দিরের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা দিনদিন প্রকট হতে প্রকটতর হয়। তারই ফলশ্রুতিতে জীবনের এক সুবর্ণক্ষণে শ্রীশ্রী কৈবল্যনাথের চতুর্থ মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ ভবতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সদগুরু শ্রীশ্রীরামঠাকুরের নাম প্রদান করেন।

ব্যক্তি জীবনে তিনি একজন সৎ, নির্ভীক, স্বধর্মপরায়ন, বিজ্ঞ শিক্ষক, পরহিতৈষী, দানশীল ও অকৃতদার ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও তিনি একজন বিজ্ঞ শাস্ত্রজ্ঞ, বিবিধ শাস্ত্র বিশারদ, সুপণ্ডিত, ধর্মীয় উপদেষ্টা, সমাজ সংস্কারক ও সুবক্তা। অবসর জীবনে তিনি এলাকায় কয়েকটি গীতা স্কুল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতেন। এলাকার গরীব ছেলেমেয়েদের নিজগৃহে বিনাপারিশ্রমিকে পড়াতেন। তাছাড়া এলাকার দরিদ্র জনসাধারণ ও বিভিন্ন মঠ মন্দিরে তাঁর সাধ্যানুযায়ী দান অনুদান সর্বজনবিদিত এবং যা এখনো চলমান। তাঁর কর্মবহুল জীবনে তিনি দেশের ৪টি মঠ মন্দিরে জলাধারসহ সুপেয় পাণীয় জলের সুবন্দোবস্ত করে দেন।

শ্রীশ্রী কৈবল্যনাথের মোহন্ত পরম্পরায় অধিষ্ঠিত হবার আগ পর্যন্ত তিনি শ্রীশ্রী চন্দ্রনাথ ধাম, সীতাকুণ্ড-এর চারুকুটিরে নিভৃত জীবনযাপন করতেন। ব্রাহ্মণ সমাজের ঈর্ষণীয় পারিবারিক ঐতিহ্যে লালিত শিক্ষা, মার্জিত চালচলন, চিত্তাকর্ষক ব্যবহার, সর্বোপরি বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার ও সদগুরু রামঠাকুরের প্রীতিময়তায় তিনি আজ শ্রীশ্রী কৈবল্যনাথের স্বরূপে কৈবল্যধামে সমাসীন।

কৈবল্যধাম-চট্টগ্রাম আজ তাঁর সার্বক্ষণিক কর্মকুশলতায় দিনদিন পরিপাটি হচ্ছে। বিদেহী ৬ষ্ঠ মোহন্ত মহারাজের স্মৃতি মন্দির নির্মাণ কাজসহ শ্রীধামকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করার চলমান প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে ২০০০ ভক্তপ্রাণ নর-নারী একসাথে বসে শ্রীনাম পাবার আবাসনের নির্মাণ কাজ। এর পরপরই শুরু হবে ১২টি শ্রাদ্ধাঙ্গনের নির্মাণ কাজ। তারপর বর্তমান মন্দিরের পেছনে নির্মিত হবে সুবিশাল প্রসাদ ঘর। কৈবল্যকুণ্ড ও কামশ্রীকুণ্ডের শ্রীমন্ডিত সংস্কার কাজের সাথে সাথে কৈবল্যধাম অঙ্গনে নির্মিত হবে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ছাত্রাবাস ও সনাতন ধর্মাবলম্বী অনাথ শিশুদের জন্য একটি অনাথালয়।

এ কাজগুলো সমাধা করতে স্বনামধন্য আর্কিটেক্ট ও দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার সমন্বয়ে একটি প্যানেল দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে উনারা মন্দিরের একটা মাস্টারপ্ল্যান পূজ্যপাদ মোহন্ত মহারাজের সমীপে উপস্থাপন করেছেন। মোহন্ত মহারাজের অনুমোদন সাপেক্ষে বর্তমানে উন্নয়ন কাজগুলো দ্রুতলয়ে এগিয়ে চলেছে। পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর রামচন্দ্রদেব এর কৃপাময় শুভাশিষ তাঁর চির পাথেয়।

Best viewed in Firefox / Google Chrome / IE 9.0 or higher
© Shri Shri Kaibalyadham Jadavpur, West Bengal India, 2013.
Website Design By: DRS Tech