NAME
Ram thakur
Ram thakur

ঠাকুরের পত্রাবলী

তাঁর অমূল্য উপদেশ ও নির্দেশ প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে আছে অনুসারী আশ্রিত এবং ভক্তদের নিকট লেখা তাঁর অজস্র চিঠিপত্রে। তাঁর উপদেশ ও শাস্ত্রবচন সম্বল করে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তাঁর অনুসারী আশ্রিতরা নিশ্চিতভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন জ্ঞানালোকে -কি জাগতিক কি আধ্যাত্মিক কর্মানুষ্ঠানে।

Ramthakur

ঠাকুরের ইহলোক ত্যাগের পর আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে একান্ত প্রাসঙ্গিক এমন ৮০৭টি চিঠি 'বেদবাণী' শিরোনামে তিন খন্ডে সংকলন ও প্রকাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ডক্টর ইন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই চিঠিগুলির কোনওটিতে এমন একটি শব্দও নেই যা কোনও ব্যক্তিকে বা কারও বিশ্বাসকে আঘাত করতে পারে। সীমাহীন আনন্দ-ভরা জগতের প্রবেশপথ জানতে আগ্রহী যে কোনও ব্যক্তির পথনির্দেশিকা হতে পারে এই চিঠিগুলো।

তিনি বলতেনঃ 'তোমার ভাগ্যকে অনুসরণ কর। বিশ্বাস রাখ ঈশ্বরের উপর। সত্যনারায়ণের চরণ আশ্রয় করে থাক। জাতি, ধর্ম, মানসিক গঠন যাই হোক না কেন, সমস্ত মানুষ এক ও একটিমাত্র সম্প্রদায়ের অংশ - মানবসম্প্রদায়। সৎপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে তার নিজের ধর্ম অবলম্বন করেই প্রত্যেকেই পারে তাঁর চরণপ্রান্তে পৌঁছে যেতে।' বিশেষ একটি উপলক্ষে তিনি বলেছিলেনঃ 'নাস্তিক হলে অন্যায় কী? আমাদের অপরিহার্য আদর্শ হওয়া উচিত সৎ থাকা এবং নির্ভেজাল বিশ্বাস ও প্রত্যয়কে অটুট রাখা'।

শ্রীশ্রীরামঠাকুর তাঁর সমস্ত আশ্রিতদের কাছে ছিলেন নিকটতম ও প্রিয়তম এক পরমাত্মীয় হয়ে। গুরু-শিষ্য সম্পর্ক গড়ার কোনও ইচ্ছা তাঁর কখনও ছিল না। একজন নিকট ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মতো তিনি তাঁর অজস্র চিঠির মাধ্যমে তাঁর অনুগামী ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন-এমন কী যখন তিনি বহু দূরে থাকতেন তখনও। সাংসারিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও অন্যান্য বিষয়ে তাঁর আশ্রিতদের অনেক কিছুই জানার থাকত। শ্রীশ্রীঠাকুর একান্তভাবে তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে লেখা চিঠিপত্রের মাধ্যমে তাঁর মূল্যবান উপদেশ ও বাণী পাঠিয়ে দিতেন। এই সংগৃহীত চিঠিপত্রের সংকলিত গ্রন্থই বেদবাণী যা তিনখণ্ডে প্রকাশিত।

Ramthakur

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডক্টর ইন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 'বেদবাণী' প্রথম খন্ডের ভূমিকায় লিখেছেনঃ 'প্রায় ২০ বৎসর পূর্ব্বে আমি এই পত্রাবলী সংগ্রহ করিতে আরম্ভ করি এবং ব্যক্তিগত কথাগুলি বর্জন করিয়া সারাংশসমূহ তাঁহার নিজস্ব ভাষায় লিখিয়া রাখি। যতদূর স্মরণ হয় প্রায় ৩ বৎসর এই কার্যে ব্রতী ছিলাম। এই সংগ্রহ আমি আমার নিজের জন্যই করিয়াছিলাম এবং তখন মনে হইয়াছিল যে, যাহা হইয়াছে তাহাই যথেষ্ট। ইহা সাধারণে প্রচার করিবার ইচ্ছা আমার আদৌ ছিল না এবং এবিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে কখনও কোন আলোচনা করি নাই। অবশ্য অনেকেই এই সংগ্রহ আমার নিকট হইতে নকল করিয়া নিয়াছেন এবং নকলের নকলও অনেক হইয়াছে বলিয়া জানি।

কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রকট লীলা সম্বরণের পর যে নূতন পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে তাহাতে এই পত্রাবলী স্থায়ীভাবে সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিতে পারিতেছি এবং নূতন উদ্যমে এই কার্য্যে ব্রতী হইয়াছি। অনেকেই অনুগ্রহ করিয়া আমার নিকট শ্রীশ্রীঠাকুরের শ্রীহস্ত লিখিত পত্রাবলী পাঠাইতেছেন এবং আরও অনেক পত্র ভবিষ্যতে আমার হাতে আসিবে এরূপ মনে হয়। কিন্তু ইহার জন্য অনির্দ্দিষ্টকাল অপেক্ষা করিয়া থাকা সঙ্গত মনে না হওয়ায় কতকগুলি পত্রের সার সংগ্রহ লইয়া এই প্রথম খন্ড প্রকাশিত হইল। আমি ভরসা করি যে, ভবিষ্যতে এরূপ আরও দুই-তিন খন্ড প্রকাশ করিতে পারিব।'

Ramthakur

অবশ্য, তৃতীয় খন্ড প্রকাশ করার যে স্বপ্ন ডক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিল তা অসম্পূর্ণ থেকে যায় কারণ ১৯৫৬ সালের ১৩ই নভেম্বর (বঙ্গাব্দ ১৩৬৩-র ২৭শে কার্তিক) মধ্যরাত্রে কৈবল্যলোকের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকে চলে যেতে হয়। তাঁর অসম্পূর্ণ মহান স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে আসে যাদবপুরে শ্রীশ্রীকৈবল্যধাম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডঃ গোবিন্দ গোপাল মুখোপাধ্যায় 'বেদবাণী, সাধ্য ও সাধনতত্ত্ব' গ্রন্থের উপক্রমণিকায় বলেছেনঃ "ভারতবর্ষের আধ্যাত্ম-সাধনার মূল উৎস হইল বেদ অর্থাৎ বিশুদ্ধতম অপৌরুষেয় জ্ঞান। সেই বেদ-বাণীই আবার যুগে যুগে, কালে কালে নানা বিশিষ্ট মহাপুরুষের কন্ঠে উৎসারিত হইয়া আসিতেছে এই পুণ্যভূমিতে এবং তাহার দ্বারাই আজও আমাদের আধ্যাত্ম-বিজ্ঞান সঞ্জীবিত, সুরক্ষিত ও সুবাহিত হইয়া আসিতেছে। বর্তমান যুগে আমাদের এই বঙ্গভূমিতে আবির্ভূত হইয়াছিলেন শ্রীশ্রীরামঠাকুর এবং অগণিত আর্ত, জিজ্ঞাসু, অর্থার্থী মানুষ ও সেই সঙ্গে কিছু জ্ঞানী মানুষও তাঁহার আশ্রয় লাভ করিয়া ধন্য হইয়াছিলেন। বাহিরের দিক দিয়া তাঁহার লেখাপড়া তেমন কিছু ছিল না। জ্ঞানের পরিধিও তেমন বিস্তৃত ছিল না অথচ তিনি ছিলেন জ্ঞানীশিরোমণি।...

...মুল যে অমূল্য বস্তুটি তিনি সকলকে দান করিয়া গিয়াছেন অকাতরে, নির্বিচারে, উচ্চ-নীচ, ধনী-নির্ধন, পন্ডিত-মুর্খ নির্বিশেষে, সেটি হইল তাঁহার এই বেদবাণী। সে-বেদবাণীর মাধ্যমে তিনি শুধু চাহিয়াছেন সকলের বোধের উদ্বোধন, জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন। সজাগ ও সদাসতর্ক হইয়া জীবনের পর্যবেক্ষণ বা পর্যালোচনা।"

বেদবাণী প্রথম খন্ডের ভূমিকায় ডক্টর ইন্দুভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত পরিষ্কার করে বলেছেনঃ

'আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হইতে বলিতে পারি যে, শ্রদ্ধা সহকারে এই পত্রাংশগুলি পুনঃপুনঃ পড়িলে ইহার মর্মার্থ ক্রমেই পরিস্ফুট হইয়া উঠে এবং যত বেশী পড়া যায় ততই নূতন নূতন ভাবের উদ্দীপন হইয়া থাকে।'

Best viewed in Firefox / Google Chrome / IE 9.0 or higher
© Shri Shri Kaibalyadham Jadavpur, West Bengal India, 2013.
Website Design By: DRS Tech